নতুন বাজেটে মধ্যবিত্তের কাঁধে বাড়তি করের চাপ

নতুন বাজেটে মধ্যবিত্তের কাঁধে বাড়তি করের চাপ

Image: The Associated Press

By Alap 24

Reporting from Dhaka - June 6, 2025

আসন্ন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে কেন্দ্র করেই কর আদায়ের কৌশল নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর তথ্য অনুযায়ী, এবার মধ্যবিত্ত আয়করদাতাদের ওপর দ্বিগুণ হারে কর আরোপ করা হচ্ছে, যা তাদের জন্য বাড়তি চাপ তৈরি করবে।

বর্তমানে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে এই সীমা বাড়িয়ে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রথম কর-স্ল্যাব ৫% থেকে বাড়িয়ে ১০% করা হচ্ছে এবং সেই স্ল্যাবের আওতাও বাড়ানো হয়েছে। আগে যেখানে ১ লাখ টাকার ওপর ৫% কর দিতে হতো, এখন সেখানে ৩ লাখ টাকার ওপর ১০% কর দিতে হবে।

উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, একজন করদাতার বার্ষিক আয় ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা, যার এক-তৃতীয়াংশ করমুক্ত। তার করযোগ্য আয় দাঁড়ায় ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। বিদ্যমান কাঠামোয় এই করদাতা কর দেন ৮ হাজার টাকা। কিন্তু নতুন কর কাঠামো অনুযায়ী তাকে কর দিতে হবে ১০ হাজার ৫০০ টাকা—অর্থাৎ আড়াই হাজার টাকা বাড়তি।

এই পরিবর্তনের ফলে সাধারণ মধ্যবিত্ত চাকরিজীবী বা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মাসিক বাজেট আরও চাপে পড়বে। বিশেষ করে যাদের আয় ৪-৮ লাখ টাকার মধ্যে, তারা সরাসরি এই করবৃদ্ধির আওতায় পড়বেন।

এছাড়া নিরাপদ সঞ্চয় হিসেবে পরিচিত সরকারি ট্রেজারি বিল বা বন্ড যেগুলোতে অনেক মধ্যবিত্ত বিনিয়োগ করেন, সেখানেও উৎসে কর দ্বিগুণ করা হচ্ছে। এর ফলে সঞ্চয়ের ওপর প্রাপ্ত সুদের প্রকৃত পরিমাণ কমে যাবে।

তবে কিছু স্বস্তির খবরও রয়েছে বাজেটে। প্রথমবার আয়কর রিটার্ন দাখিল করবেন—এমন করদাতাদের জন্য সর্বনিম্ন করের সীমা ১ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে রাখা হচ্ছে। নতুন করদাতাদের করভীতি দূর ও করের আওতা বাড়ানোর লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেমন ধান, গম, আলু, পেঁয়াজ, ডাল, তেল, চিনি, লবণ, মসলা ও ফলমূল ইত্যাদি আমদানিতে স্থানীয় ঋণপত্র ব্যবহারের সময় উৎসে কর ১% থেকে কমিয়ে ০.৫০% করা হচ্ছে। এতে কিছুটা হলেও মূল্যস্ফীতির চাপ নিয়ন্ত্রণে আসার আশা করা যাচ্ছে।

সব মিলিয়ে, প্রস্তাবিত বাজেট একদিকে নতুন করদাতাদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক হলেও, পুরোনো ও মধ্য আয়ের করদাতাদের জন্য এটি বাড়তি বোঝার নাম হয়ে উঠতে পারে। মধ্যবিত্ত শ্রেণির দীর্ঘদিনের চাহিদা ছিল ন্যায্য কর কাঠামো ও কিছুটা করছাড়ের সুবিধা, কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে তাদের দিকেই এবার করনীতির কড়াকড়ি সবচেয়ে বেশি।

নীতিনির্ধারকদের প্রতি তাই প্রত্যাশা থাকবে—এই শ্রেণির অবদান ও সক্ষমতা মূল্যায়ন করে করনীতিকে আরও ভারসাম্যপূর্ণ ও সহানুভূতিশীল করে তোলা হোক।

 
 

Related Topics:

#ট্রাম্প_নিউজ

Share: