ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার কড়া নিন্দা রাশিয়ার, ‘পারমাণবিক বিপর্যয়ের’ হুঁশিয়ারি
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কড়া সমালোচনা করেছে রাশিয়া। দেশটি এই হামলাকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন, উসকানিমূলক ও বিপজ্জনক’ আখ্যায়িত করে সতর্ক করে বলেছে, এর ফলে মধ্যপ্রাচ্য একটি ভয়াবহ যুদ্ধের দিকে ধাবিত হতে পারে, যার পরিণতিতে ‘পারমাণবিক বিপর্যয়’ও ঘটতে পারে।
রবিবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে রুশ রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ সনদ, আন্তর্জাতিক আইন এবং পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (NPT) লঙ্ঘন করেছে। আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থা (IAEA)-র তত্ত্বাবধানে থাকা স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা চালিয়ে তারা বৈশ্বিক মতামতকে অবজ্ঞা করেছে।”
তিনি অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র একরকম ‘প্যান্ডোরার বাক্স’ খুলে দিয়েছে এবং এখন কেউই জানে না এর পরিণতি কী হতে পারে। এ সময় নেবেনজিয়া ২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেন, “তখন জাতিসংঘে মিথ্যা তথ্য দেখিয়ে হামলার বৈধতা দেখানো হয়েছিল। আজকের পরিস্থিতিও অনেকটা তেমনই।”
রুশ রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, “ইরানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করার যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তার কোনো প্রমাণ নেই। এমনকি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর আগের মূল্যায়নেও তা প্রতিফলিত হয়নি। তা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেসব রিপোর্ট উপেক্ষা করে নিজের বিবেচনায় কাজ করছেন।”
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘মনগড়া গল্প তৈরি করে বলপ্রয়োগের অজুহাত দাঁড় করানো’র অভিযোগ এনে বলেন, “এই হামলা শুধু কূটনৈতিক কাঠামো নয়, বরং বৈশ্বিক পরমাণু নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকেও বিপর্যস্ত করছে।”
নেবেনজিয়া পশ্চিমা দেশগুলোর দ্বিচারিতা নিয়েও সমালোচনা করেন। “একদিকে তারা সংযমের আহ্বান জানায়, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হামলার সমালোচনা না করে বরং ইরানকেই দায়ী করছে—এটি ভণ্ডামির চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত,” বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “ইরান হলো বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পর্যবেক্ষণে থাকা দেশগুলোর একটি, অথচ তাকেই লক্ষ্য করে হামলা চালানো হচ্ছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, যেটি নিজেই এখনো NPT চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি, তা-ই হামলাকারী।”
রুশ রাষ্ট্রদূতের অভিযোগ, “এই হামলা IAEA ও বৈশ্বিক পারমাণবিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। যদি এভাবে উত্তেজনা বাড়তে থাকে, তাহলে বিশ্ব আবারও অনিয়ন্ত্রিত পারমাণবিক ঝুঁকির যুগে প্রবেশ করতে পারে।”
তিনি IAEA মহাপরিচালকের নীরব ভূমিকারও কড়া সমালোচনা করেন এবং বলেন, “তিনি এখনো একবারের জন্যও ইসরায়েলকে NPT-তে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাননি।”
রাশিয়া এই সংকট নিরসনে জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে। চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে মিলে জাতিসংঘে একটি খসড়া প্রস্তাবও জমা দিয়েছে মস্কো। এতে অবিলম্বে নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি এবং কূটনৈতিক আলোচনায় ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।