‘ওয়ান টাইম প্লাস্টিক’ ব্যবহার বন্ধের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

‘ওয়ান টাইম প্লাস্টিক’ ব্যবহার বন্ধের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

Image: The Associated Press

By Alap 24

Reporting from Dhaka - June 29, 2025

ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বর্জনের আহ্বানে প্রধান উপদেষ্টা: “এটা মানবজাতির আত্মবিধ্বংসী পথ”


জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা ২০২৫–এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস দেশের নাগরিকদের ওয়ান টাইম প্লাস্টিক ব্যবহার পরিহারে আন্তরিক আহ্বান জানিয়েছেন। চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে তিনি একটি সোনালু গাছ রোপণের মধ্য দিয়ে অভিযানের উদ্বোধন করেন এবং প্লাস্টিক দূষণকে জলবায়ু সংকটের এক ভয়াবহ দিক হিসেবে চিহ্নিত করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “পৃথিবী আজ যুদ্ধ, প্রযুক্তি অপব্যবহার এবং জলবায়ু সংকটের সম্মুখীন। আমরা বুঝতেই পারছি না, আসল সংকট কী—এটা প্রকৃতির রোষ নয়, বরং মানবজাতির অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডের ফল। আমরা প্রকৃতির সঙ্গে তাল না মিলিয়ে চলি, বরং তার বিরুদ্ধে লড়াই করি।”

তিনি প্লাস্টিক ব্যবহারের ভয়াবহতা তুলে ধরে বলেন, “এই উপাদান আজ এমন এক বিপজ্জনক স্তরে পৌঁছেছে যেখানে মনে হয়, হয় মানুষ থাকবে, না হয় প্লাস্টিক। আমাদের জলাশয়গুলো পলিথিনে ঢেকে যাচ্ছে, নদীর তলদেশে জমেছে পুরু স্তরের প্লাস্টিক। মাইক্রোপ্লাস্টিক পৌঁছে যাচ্ছে মায়ের দুধে, শিশুর দেহে, এমনকি ইলিশ মাছের অন্তর্গত কোষেও।”

বাংলাদেশ বিশ্বে নবম অবস্থানে রয়েছে প্লাস্টিক দূষণের দিক থেকে—এই তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “এটা কোনো গর্বের বিষয় নয়। বরং এটি প্রমাণ করে, আমরা আত্মবিধ্বংসী পথেই হাঁটছি।”

সরকার ইতোমধ্যেই পলিথিন শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধ করার পথে পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, “একটি প্রতীকী পদক্ষেপ হিসেবে বোতলজাত পানির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা শুরু করেছি। শুরুতে অনেকে হাসাহাসি করেছে, কিন্তু এখন আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে। সবচেয়ে আশার কথা—আমাদের তরুণ প্রজন্ম বিষয়টি নিয়ে বেশি সচেতন।”

তিনি প্লাস্টিক ব্যবহারে ধাপে ধাপে নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব দিয়ে বলেন, “সপ্তাহে একদিন প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করা হোক, পরে সেটা বাড়িয়ে সাত দিন। এভাবেই অভ্যাস তৈরি হবে। ইতোমধ্যে সরকারি দপ্তরগুলোতে ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।”

জাতিসংঘের উদ্যোগে প্রণীত প্লাস্টিক দূষণ বিরোধী বৈশ্বিক আইনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ এই প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশ নিচ্ছে। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই দেশের শালবন, চুনতি ও সোনাদিয়ার মতো বনাঞ্চল পুনরুদ্ধারে উদ্যোগ নিয়েছে। নদী দখলমুক্ত ও দূষণমুক্ত করাও আমাদের অগ্রাধিকার।”

তিনি তরুণদের প্রতি বিশেষ আহ্বান জানিয়ে বলেন, “তোমরাই পারো এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে। কার্বন নিঃসরণ শূন্যের পথে হাঁটতে এখনই শুরু করো। একদিন নয়, প্রতিদিনই আমাদের পরিবেশের জন্য কিছু করতে হবে।”

পরিবেশের ক্ষতি করে যেকোনো উন্নয়নকে তিনি ‘ভ্রান্ত উন্নয়ন’ বলে অভিহিত করে বলেন, “নদী ধ্বংস, বন উজাড়, জীববৈচিত্র্য নিধন—এসব দিয়ে কোনো উন্নয়ন হয় না। আমাদের উন্নয়নের সংজ্ঞা বদলাতে হবে। প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে টেকসই পথে এগোতেই হবে।”

অবশেষে তিনি বলেন, “এই পৃথিবী আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের। আমরা যদি এখনই জেগে না উঠি, আমাদের অস্তিত্বই থাকবে না। ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বর্জন হোক সেই জাগরণের প্রথম পদক্ষেপ।”

Related Topics:

Share: