‘অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থা নিয়ে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় ঢাকা চতুর্থ

‘অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থা নিয়ে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় ঢাকা চতুর্থ

Image: The Associated Press

By Alap 24

Reporting from Dhaka - June 29, 2025

বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান চতুর্থ: বায়ুমানের সূচক পৌঁছেছে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ স্তরে


সাপ্তাহিক ছুটির দ্বিতীয় দিন শনিবার, সুইসভিত্তিক বৈশ্বিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইকিউএয়ার প্রকাশিত এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) অনুযায়ী, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে উঠে এসেছে। তালিকায় ঢাকার ওপরে রয়েছে ভারতের তিনটি শহর—দিল্লি, কলকাতা ও মুম্বাই—যা দক্ষিণ এশিয়ার ভয়াবহ বায়ুদূষণের চিত্র আরও স্পষ্ট করে তোলে।

শনিবার সকাল ১১টায় ঢাকার একিউআই স্কোর ছিল ১৯৮, যা সাধারণ জনগণের জন্য ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলে চিহ্নিত। একই সময়ে বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক প্রকাশিত রিয়েলটাইম তথ্যে ঢাকার একিউআই স্কোর ছিল ২০১, যা ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ স্তরের বলে ধরা হয়। এই অমিলটি যেমন জরুরি সতর্কতার ইঙ্গিত দেয়, তেমনি রাজধানীর পরিবেশ সংকটের গভীরতাও তুলে ধরে।

বায়ুর মান মূলত নির্ধারণ করা হয় বাতাসে থাকা সূক্ষ্ম ধূলিকণা (PM10), অতিসূক্ষ্ম ধূলিকণা (PM2.5), সালফার ডাই-অক্সাইড (SO₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (CO), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (NO₂) এবং ওজোন গ্যাসের উপস্থিতির ওপর ভিত্তি করে। একিউআই যত বাড়ে, স্বাস্থ্যঝুঁকি ততই বেশি হয়—বিশেষত শিশু, বৃদ্ধ ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত মানুষের জন্য।


আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী একিউআই স্কোর:

  • ০–৫০: ভালো

  • ৫১–১০০: সহনযোগ্য

  • ১০১–১৫০: সংবেদনশীল শ্রেণির জন্য অস্বাস্থ্যকর

  • ১৫১–২০০: সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর

  • ২০১–৩০০: খুবই অস্বাস্থ্যকর

  • ৩০১ বা তদূর্ধ্ব: বিপজ্জনক


পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউল হক
বলেন, “শীতকালে একিউআই ২০০-এর নিচে রাখা অত্যন্ত কঠিন। পূর্ববর্তী শীত মৌসুমগুলোতে এই সূচক প্রায়ই ২৫০ থেকে ৩০০-র মধ্যে উঠে গেছে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এবার আমরা ২০০-এর নিচে রাখার চেষ্টা করছি, তবে তা খুবই চ্যালেঞ্জিং।”

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পরিবেশ অধিদপ্তর সারা দেশে ১২টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে, যার মধ্যে ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ৮টি আদালত সার্বক্ষণিক কাজ করছে


জিয়াউল হক আরও বলেন, “বায়ুদূষণ শুধু পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের একার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এটি পরিবহন, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং নাগরিক অভ্যাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। ঢাকার বাইরের জেলা থেকেও দূষণ রাজধানীতে প্রবেশ করছে। তাই সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া এটি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।”

এই সংকট মোকাবিলায় সরকার নতুন ইটভাটার অনুমোদন ও পরিবেশ ছাড়পত্র স্থগিত করেছে এবং কালো ধোঁয়া নির্গতকারী পুরনো যানবাহন অপসারণে ছয় মাসের সময়সীমা নির্ধারণ করেছে।


এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তর নিয়মিতভাবে তাদের ওয়েবসাইটে ঢাকাসহ আশপাশের অঞ্চলের দূষণের মাত্রা সম্পর্কে সতর্কতা প্রকাশ করছে। তারা জনগণকে বাইরে বের হওয়ার সময় মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে এবং শিশু, বয়স্ক ও শ্বাসকষ্ট রোগীদের অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে


বিশেষজ্ঞদের মতে, নাগরিক সচেতনতা, পরিবহন ও শিল্পনীতি সংস্কার এবং কার্যকর বাস্তবায়নের মাধ্যমেই দীর্ঘমেয়াদে বায়ুমান উন্নয়ন সম্ভব। এই সংকট শুধুই পরিবেশগত নয়—এটি এখন জনস্বাস্থ্যের জন্য এক তাৎক্ষণিক জরুরি অবস্থা।

Related Topics:

Share: