বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৫: প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে এখনই সময়

বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৫: প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে এখনই সময়

Image: The Associated Press

By Admin User

Reporting from Dhaka - June 29, 2025

বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৫: প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে এখনই সময়


প্রতি বছরের মতো এ বছরও ৫ জুন পালিত হচ্ছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। জাতিসংঘ ঘোষিত এ দিবসটি বিশ্বব্যাপী পরিবেশ সুরক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অগ্রণী মঞ্চ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিবছর নির্দিষ্ট একটি প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়, যা পরিবেশের একটি জরুরি ইস্যুকে সামনে আনে। এ বছর প্রতিপাদ্য হলো ‘প্লাস্টিক দূষণ আর নয়’ এবং স্লোগান ‘প্লাস্টিক দূষণ আর নয়, বন্ধ করার এখনই সময়’। প্লাস্টিক ও প্লাস্টিকজাতীয় দ্রব্যের ব্যাপক উৎপাদন ও ব্যবহারের ফলে মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর যে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, তার প্রেক্ষিতে এই প্রতিপাদ্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও সময়োপযোগী।

প্লাস্টিক একটি কৃত্রিম বস্তু, যা আবিষ্কারের পর তার বহুমুখী ব্যবহার ও সুবিধার কারণে দ্রুত মানুষের দৈনন্দিন জীবনে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। ওজনে হালকা, নমনীয় এবং দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় এটি নানা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে প্লাস্টিকের উৎপাদন ব্যাপক হারে বেড়েছে; ১৯৫০ সালে যেখানে মাত্র ১.৫ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক ব্যবহৃত হতো, সেখানে ২০২০ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৩৬৭ মিলিয়ন টনে। তবে এর ব্যাপক ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে এর নেতিবাচক প্রভাবও দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে। আজ প্লাস্টিক দূষণ পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি পরিবেশে, পাহাড়, নদী, বন ও সমুদ্রসহ ছড়িয়ে পড়েছে এবং মানবসহ অন্যান্য জীবের স্বাস্থ্য ও বাস্তুতন্ত্রকে মারাত্মকভাবে বিপন্ন করছে।


প্লাস্টিক দূষণের প্রভাব তার আকার ও রূপের ওপর নির্ভরশীল। এটি মূলত তিন ভাগে বিভক্ত: ম্যাক্রোপ্লাস্টিক (৫ মিমি বা তার বেশি), মাইক্রোপ্লাস্টিক (৫ মিমির কম) এবং ন্যানোপ্লাস্টিক (১ মাইক্রোমিটারের কম)। ম্যাক্রোপ্লাস্টিক মাটির স্বাভাবিক গঠন ও পুষ্টি চক্র ব্যাহত করে, জলাবদ্ধতা সৃষ্টি ও জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। মাইক্রোপ্লাস্টিক খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করে, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি করে। এটি শ্বাসকষ্ট, হরমোনজনিত সমস্যা, দৈহিক বিকাশে বাধা, প্রজননশক্তি হ্রাস ও ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে।

কৃষি খাতে প্লাস্টিকের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি, যেখানে মালচিং, ছাউনি, সার-বীজ সংরক্ষণ, পানি পরিবহন ও ফসল রক্ষায় প্লাস্টিক ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়। তবে এই প্লাস্টিকের প্রভাব মাটির উর্বরতা কমিয়ে ফসলের উৎপাদনশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। বিশ্বব্যাপী বছরে কৃষিতে প্রায় ২.২৫ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক ব্যবহার হয়, যা পরিবেশ ও স্বাস্থ্যকে বিপন্ন করছে। বাংলাদেশে যথাযথ প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব থাকায় ক্ষতিও বহুমাত্রিক।


বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক ব্যবহারে দেশভেদে বড় পার্থক্য রয়েছে। উন্নত দেশে মাথাপিছু ব্যবহার বেশি (যেমন: যুক্তরাষ্ট্র ২২০ কেজি), আর উন্নয়নশীল দেশে কম (বাংলাদেশ ৯ কেজি)। তবে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উন্নয়নশীল দেশগুলো পিছিয়ে, যেখানে বাংলাদেশে ৮৩.২% প্লাস্টিক বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থাপিত হয় না। এই বাস্তবতা নির্দেশ করে যে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতি আইন প্রণয়ন ও কঠোর বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করে।

প্লাস্টিক দূষণ রোধে করণীয়ের মধ্যে রয়েছে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ, স্কুল ও গণমাধ্যমে নিয়মিত তথ্য প্রচার, ও কঠোর আইন প্রয়োগ। পরিবেশবান্ধব বিকল্প সামগ্রী উৎপাদন ও ব্যবহারে উৎসাহ দিতে ভর্তুকি ও প্রণোদনা দেওয়া যেতে পারে। এককালীন প্লাস্টিক ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে, যেমন প্লাস্টিকের পাত্র, গ্লাসের পরিবর্তে সিরামিক বা ধাতব পাত্র ব্যবহার। প্লাস্টিক পণ্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য করা ও বর্জ্য সুষ্ঠুভাবে সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ক্ষতি কমানো সম্ভব।

পরিশেষে, প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা রোধে আর দেরি করা যাবে না। বাংলাদেশসহ ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোতে প্লাস্টিক দূষণের নেতিবাচক প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে এখনই সক্রিয়, দীর্ঘমেয়াদী ও ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ জরুরি। শুধুমাত্র দিবস পালন নয়, বরং বছরভর এই দূষণের বিরুদ্ধে নিবিড় কাজ করে তবেই আমরা স্থায়ী ফলাফল অর্জন করতে পারব।

Related Topics:

Share: