তাইওয়ান প্রশ্নে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সংঘাত: দক্ষিণ চীন সাগরের ভবিষ্যৎ

তাইওয়ান প্রশ্নে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সংঘাত: দক্ষিণ চীন সাগরের ভবিষ্যৎ

Image: The Associated Press

By Admin User

Reporting from Dhaka - June 26, 2025

তাইওয়ান প্রশ্নে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সংঘাত: দক্ষিণ চীন সাগরের ভবিষ্যৎ


তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘদিনের কৌশলগত উত্তেজনা বর্তমানে এক নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। একদিকে তাইওয়ানকে চীনের "অবিচ্ছেদ্য অংশ" বলে দাবি করে বেইজিং; অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের "স্বশাসনের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ" থাকায় দুই পরাশক্তির মধ্যে বিরোধ ক্রমশ তীব্রতর হচ্ছে। এই দ্বন্দ্ব শুধু তাইওয়ান দ্বীপকে ঘিরেই সীমাবদ্ধ নয়— বরং দক্ষিণ চীন সাগরের ভূরাজনৈতিক ভবিষ্যতকেও অনিশ্চয়তায় ফেলেছে।

চীনের পক্ষ থেকে “এক চীন নীতি” কঠোরভাবে অনুসরণ করা হলেও, যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা “স্ট্র্যাটেজিক অ্যাম্বিগুইটি” বা কৌশলগত অনির্ধারকতা বজায় রেখে তাইওয়ানের প্রতি সামরিক ও কূটনৈতিক সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। ২০২২ সালে সাবেক মার্কিন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ান সফর করার পর এই উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। এর জবাবে চীন তাইওয়ানকে ঘিরে ব্যাপক সামরিক মহড়া চালায়, যা কার্যত দ্বীপটিকে অবরুদ্ধ করে ফেলে।

দক্ষিণ চীন সাগর আজ বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক রুট, যার মাধ্যমে বছরে প্রায় ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়। এই অঞ্চলে চীনের কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণ, সেনা স্থাপন এবং মালিকানার দাবি নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোও দক্ষিণ চীন সাগরের বিভিন্ন অংশ নিয়ে চীনের দাবির বিরোধিতা করছে। এর ফলে এই অঞ্চল হয়ে উঠেছে এশিয়ার ভূরাজনীতির টানাপোড়েনের কেন্দ্রবিন্দু।

যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের অংশ হিসেবে তারা এই অঞ্চলে তাদের নৌ-উপস্থিতি বৃদ্ধি করেছে, “ফ্রিডম অফ ন্যাভিগেশন” মিশনের আওতায় নিয়মিত টহল পরিচালনা করছে। চীন এটিকে তাদের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখে। এই মেরুকরণ পরিস্থিতি দক্ষিণ চীন সাগরকে ভবিষ্যতে একটি সামরিক সংঘাতের সম্ভাব্য রণক্ষেত্রে পরিণত করতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন চাইছে তাইওয়ানকে পুনঃএকত্রীত করে ২১ শতকের মধ্যেই “চীনা জাতীয় পুনর্জাগরণ” সম্পন্ন করতে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই হস্তক্ষেপ চীনকে সামরিক সমাধানের পথ বেছে নিতে উৎসাহিত করছে বলেও মত রয়েছে। বর্তমানে তাইওয়ান প্রণালীতে সামরিক মহড়া, ড্রোন ব্যবহার, এবং হ্যাকিং আক্রমণসহ বহুমুখী কৌশল বাস্তবায়ন করছে চীন।

এই প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ চীন সাগর শুধু একটি আঞ্চলিক ইস্যু নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে বিশ্ব রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ল্যাবরেটরি— যেখানে জোট রাজনীতি, সামুদ্রিক আইন, অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ এবং শক্তির প্রতিযোগিতা একত্রে মিলিত হয়েছে।

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্যও এই সংঘাত গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে বাণিজ্যিক স্বার্থ, অন্যদিকে কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয়টি এখানে গভীরভাবে জড়িত। বাংলাদেশ বর্তমানে “ফ্রেন্ডশিপ টু অল, এনিমিটি টু নান” নীতিতে থাকলেও, ইন্দো-প্যাসিফিক ফ্রেমওয়ার্কে অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে—বিশেষ করে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং দক্ষিণ চীন সাগর ব্যবহারভিত্তিক বাণিজ্য নিরাপত্তা নিয়ে।

অতএব, চীন-যুক্তরাষ্ট্র দ্বন্দ্ব শুধুমাত্র দুই পরাশক্তির মধ্যে নয়, এটি সমগ্র এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ভবিষ্যতের অভিমুখ নির্ধারণ করবে। আর তাই তাইওয়ান প্রশ্ন ও দক্ষিণ চীন সাগরের ভবিষ্যত শুধুই সামরিক বা কূটনৈতিক ইস্যু নয়— এটি বিশ্বের পরবর্তী ভূরাজনৈতিক তিক্ততার সূচনা হতে পারে।

Related Topics:

Share: