ইরানে সরকার পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছেন ট্রাম্প? বিপাকে পড়েছে নিজ প্রশাসন ও রিপাবলিকান দল
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সরকার পরিবর্তন বিষয়ে একটি বিতর্কিত মন্তব্য করে নিজ প্রশাসনের অবস্থানকে জটিল করে তুলেছেন। যদিও তাঁর শীর্ষ নিরাপত্তা উপদেষ্টারা বারবার দাবি করছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্দেশ্য কেবল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করা, সরকার পতন নয়—তবুও ট্রাম্পের সর্বশেষ বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে তুলেছে।
রবিবার ট্রাম্প নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম Truth Social-এ এক পোস্টে লেখেন,
“Regime change” isn’t a politically correct phrase. But if Iran’s current regime can’t make Iran great again, why shouldn’t there be regime change? Make Iran Great Again!”
এই বক্তব্যে ট্রাম্প সরাসরি সরকার উৎখাতের আহ্বান জানাননি কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে কিছু বলেননি, কিন্তু ভাষার ভঙ্গি এবং সময়জ্ঞান মিলিয়ে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এতে ইরান সরকারের পতনের ইঙ্গিত স্পষ্ট।
বিপরীতে প্রশাসনের বার্তা: কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি থামানোই উদ্দেশ্য
ট্রাম্পের বক্তব্যের বিপরীতে, তাঁর শীর্ষ জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা একযোগে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এই বার্তা পৌঁছে দিতে যে, যুক্তরাষ্ট্র কেবল ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ধ্বংস করতে চায়। ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ—তিনজনই রবিবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জোর দিয়ে বলেছেন, “Regime change is not our goal. We want to dismantle Iran’s nuclear program—nothing more.”
ভ্যান্স বলেন, “প্রেসিডেন্ট আমাদের যেটা বলেছেন, তা হলো—ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির অবসান ঘটানো। সরকার পরিবর্তন নয়।”
ভিতরে-বাইরে সমন্বয়হীনতা, দলে বিভাজন স্পষ্ট
ট্রাম্পের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টটি তাঁর উপদেষ্টাদের দেওয়া বার্তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে উঠেছে। একদিকে তাঁরা তেহরানকে সীমিত প্রতিক্রিয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন, অন্যদিকে ট্রাম্পের ইঙ্গিত সেই প্রচেষ্টাকে দুর্বল করে দিচ্ছে।
এই অবস্থান দলীয় ভেতরেও বিভাজন তৈরি করেছে। রিপাবলিকান পার্টির ভেতরে একদল যুদ্ধবিরোধী গোষ্ঠী রয়েছে, যারা শুরু থেকেই ইরানে হামলার বিরোধিতা করে আসছে। কংগ্রেস সদস্য মার্জোরি টেইলর গ্রিন এক্সে দেওয়া এক পোস্টে লেখেন, “সরকার পতন, বিদেশি যুদ্ধ এবং অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানির মুনাফার জন্য আমাদের সেনারা প্রাণ দিচ্ছে। যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁদের দেহ ও মন চিরতরে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।”
সাবেক যুদ্ধবিরোধী, এখন সমর্থনে? জে ডি ভ্যান্সের অবস্থান ঘিরে আলোচনা
জে ডি ভ্যান্স, যিনি একসময় রিপাবলিকান পার্টির যুদ্ধবিরোধী কণ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন, এখন ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন। তিনি বলেন, “If Iran commits to halting its nuclear weapons program, the U.S. is open to dialogue—even with the current Iranian government.”
এই অবস্থান অনেকের জন্য বিস্ময়কর। বিশ্লেষকদের মতে, এতে রিপাবলিকান ভেতরের রাজনীতিতে ট্রাম্পের নিয়ন্ত্রণ ও চাপ স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
ইসরায়েলের পুরোনো অবস্থান ও নেতানিয়াহুর ইঙ্গিত
এই প্রেক্ষাপটে উঠে আসছে ইসরায়েলের অবস্থানও। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বহু আগে থেকেই বলে আসছেন, ইরানে সরকার পরিবর্তনই তাঁর চূড়ান্ত লক্ষ্য নয়, তবে সেই সম্ভাবনা থাকলে তা ‘গ্রহণযোগ্য ফলাফল’ হতে পারে।
ট্রাম্পের অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ: দলে ঐক্য বজায় রাখা কি সম্ভব?
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও বর্তমানে হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভিক্টোরিয়া কোয়েটস বলেন, “The biggest question now is whether Trump can keep his team unified.” তিনি বলেন, জে ডি ভ্যান্স যেসব প্রশ্ন তুলেছেন, তা জরুরি। তবে সরকার পরিবর্তন হলেও, ভ্যান্স প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের পেছনে থাকবেন—ঠিক যেমন ইরানে সামরিক অভিযানের ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন।
উপসংহার: যুদ্ধ কি নাকি কৌশলগত চাপ?
যদিও ট্রাম্প দাবি করছেন, সরকার পতন ছাড়াও ইরানে সামরিক পদক্ষেপ সফলভাবে পরিচালনা সম্ভব, বাস্তবতা বলছে তাঁর কথায় ও দলের কৌশলে স্পষ্ট ফাটল রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এখন বিশ্ব তাকিয়ে রয়েছে—যুক্তরাষ্ট্র আসলে চায় কী, কেবল একটি পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস, নাকি আড়ালে লুকিয়ে থাকা সরকার পরিবর্তনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা?