ইরানের ইউরেনিয়াম কোথায় গেল? মার্কিন হামলার পর তেজস্ক্রিয়তার প্রশ্ন ও রহস্যঃ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, বিমান হামলা চালিয়ে ইরানের প্রধান প্রধান পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, এই হামলার পর কোনো উল্লেখযোগ্য তেজস্ক্রিয়তা ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফলে প্রশ্ন উঠছে—ইরানের ইউরেনিয়াম কোথায় গেল?
হামলার প্রেক্ষাপট
গত শনিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের নাতাঞ্জ, ইসফাহান ও ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। হামলার কারণ হিসেবে ট্রাম্প বলেন, ইরান যাতে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন না করতে পারে, সেই লক্ষ্যেই অভিযান চালানো হয়েছে।
ইরানি প্রতিক্রিয়া ও পশ্চিমা মূল্যায়ন
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন বলে নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এই আগ্রাসনের জন্য দায়ী কেবল ওয়াশিংটন।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) বলছে, হামলার পর ফর্দোসহ কোনো স্থাপনার আশেপাশে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বেড়েছে এমন কোনো তথ্য নেই। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ কুয়েত থেকেও কোনো রেডিয়েশন বেড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
সম্ভাব্য কারণ: ইউরেনিয়াম সরিয়ে ফেলা?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান সম্ভবত আগেই জানত হামলা আসছে। ট্রিটা পার্সি বলেন, ইরান আগেভাগেই ইউরেনিয়াম সরিয়ে ফেলতে পারে, কারণ মার্কিন সেনা মোতায়েন ও তৎপরতার মাধ্যমে তারা ইঙ্গিত পেয়েছিল।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারে জানানো হয়, তিনটি স্থাপনাই আগেই খালি করে ফেলা হয়েছিল এবং সেগুলোতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। রেজা কারদান, ইরানের পারমাণবিক নিরাপত্তা প্রধান, বলেন, তেজস্ক্রিয়তার কোনো মাত্রা বাড়েনি এবং আগে থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।
তিনটি স্থাপনায় কী ঘটেছে?
ফর্দো: এটি একটি ভূগর্ভস্থ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। এখানে যুক্তরাষ্ট্র বাংকারবিধ্বংসী বোমা ব্যবহার করেছে। মার্কিন দাবি অনুযায়ী, এখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
নাতাঞ্জ: এটি ইরানের সবচেয়ে বড় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। পাইলট ও গভীর দুটি ইউনিট রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা নিয়ে মার্কিন ও ইরানি ভাষ্য ভিন্ন।
ইসফাহান: এটি একটি পুরোনো গবেষণাগার ও রূপান্তর কেন্দ্র। এখানে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়। IAEA বলছে, এখানে ছয়টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে তেজস্ক্রিয়তার প্রমাণ নেই।
উপসংহারঃ
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি অনুযায়ী ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এখন পর্যন্ত এর পক্ষে নিরপেক্ষ প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আর তেজস্ক্রিয়তার অনুপস্থিতি ইঙ্গিত দেয়—সম্ভবত ইরান হামলার পূর্বাভাস পেয়ে মূল্যবান উপাদান সরিয়ে ফেলেছিল। তবে সেগুলো কোথায় গেছে, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।