বাংলাদেশের আকাশ প্রতিরক্ষায় নতুন রাডার: কৌশলগত অগ্রগতি না প্রতিরক্ষা উদ্বেগ?

বাংলাদেশের আকাশ প্রতিরক্ষায় নতুন রাডার: কৌশলগত অগ্রগতি না প্রতিরক্ষা উদ্বেগ?

Image: The Associated Press

By Alap 24

Reporting from Dhaka - June 25, 2025

বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে যুক্ত হলো আধুনিক ‘জিএম ৪০৩ এম’ আকাশ প্রতিরক্ষা রাডার: সম্ভাবনা ও সীমাবদ্ধতা

বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় যুক্ত হলো অত্যাধুনিক ‘জিএম ৪০৩ এম’ রাডার, যা দেশের আকাশ নিরাপত্তায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। বুধবার বগুড়ায় বিমানবাহিনীর একটি রাডার ইউনিটে বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন আনুষ্ঠানিকভাবে এই রাডারের উদ্বোধন করেন। আইএসপিআর থেকে জানানো হয়েছে, বিমান বাহিনী আধুনিকায়নের ধারাবাহিক অংশ হিসেবে বিভিন্ন নতুন যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি সংযোজনের মাধ্যমে সামরিক সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।


ইতিবাচক দিকসমূহ:

১. বর্ধিত নজরদারি ও সতর্কতা: ‘জিএম ৪০৩ এম’ রাডার অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত, যা বিস্তৃত ও দূরত্বে আকাশ থেকে আগত সকল ধরনের হুমকি সনাক্ত করতে পারবে। এর ফলে দ্রুত ও সময়মতো প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হবে।
২. সামরিক সক্ষমতায় উন্নতি: এই রাডার যুক্ত হওয়ায় দেশের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে, যা সামরিক সংঘাত বা আক্রমণ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
৩. আঞ্চলিক নিরাপত্তায় অবদান: দক্ষিণ এশিয়ার উত্তেজনাপূর্ণ ভূরাজনৈতিক পরিবেশে বাংলাদেশের এমন আধুনিকায়ন প্রতিবেশী দেশগুলোর মাঝে দেশের নিরাপত্তা ও প্রভাব বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে।
৪. জাতীয় প্রত্যয় ও আত্মবিশ্বাস: আধুনিক প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির সংযোজন দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যকার আত্মবিশ্বাস ও জাতীয় প্রত্যয় বাড়ায়, যা সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিবেশের জন্য ইতিবাচক।


নেতিবাচক ও সীমাবদ্ধতা:

১. প্রশিক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ: আধুনিক প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দক্ষ জনবল ও পর্যাপ্ত বাজেটের প্রয়োজন। যথাযথ প্রশিক্ষণ ছাড়া এই রাডারের সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানো কঠিন।
২. বৈদেশিক নির্ভরতা: অধিকাংশ আধুনিক সামরিক প্রযুক্তি বিদেশি উৎস থেকে আসায় দীর্ঘমেয়াদে স্বনির্ভরতা হ্রাস পেতে পারে। প্রযুক্তিগত সহায়তা ও যন্ত্রাংশ সংগ্রহে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
৩. আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা: প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রতিবেশী দেশগুলোতে উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে, যা উত্তেজনা বাড়িয়ে সামরিক প্রতিযোগিতায় পরিণত হতে পারে।
৪. অর্থনৈতিক চাপ: সামরিক খাতে বেশি বিনিয়োগ অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যয় কমে যেতে পারে। দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাজেট ব্যবস্থাপনা জরুরি।


পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা:

বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন হচ্ছে কেবল আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে স্বনির্ভরতা ও প্রযুক্তি বিকাশে মনোযোগ দেওয়া। দেশে প্রযুক্তি গবেষণা, প্রতিরক্ষা শিল্প ও মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। প্রশিক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিয়মিত কর্মসূচি ও বাজেট নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি আঞ্চলিক কূটনীতি জোরদার করে নিরাপত্তার জন্য পারস্পরিক বিশ্বাস প্রতিষ্ঠায় কাজ করা উচিত।

এছাড়া ‘বাংলার আকাশ রাখিব মুক্ত’ স্লোগানটি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন সমন্বিত জাতীয় নিরাপত্তা নীতি, যা সামরিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় নিয়ে তৈরি হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ নিজের ভূরাজনৈতিক গুরুত্বকে শক্তিশালী করবে এবং ভবিষ্যতের যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকবে।

Related Topics:

Share: