ইরানের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবকে চিঠি পাঠালো কাতার, আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ

ইরানের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবকে চিঠি পাঠালো কাতার, আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ

Image: The Associated Press

By Alap 24

Reporting from Dhaka - June 24, 2025

ইরানের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবকে চিঠি পাঠালো কাতার, আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার পারদ যখন ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী, তখন ইরানের একটি সরাসরি সামরিক পদক্ষেপ কাতারকে কঠোর কূটনৈতিক অবস্থান নিতে বাধ্য করেছে। সম্প্রতি কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত আল-উদেইদ বিমানঘাঁটিতে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পক্ষ থেকে চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর, কাতার জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেসের কাছে একটি প্রতিবাদপত্র প্রেরণ করেছে। এতে এই হামলাকে "চরম বিপজ্জনক উসকানি" ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রশ্নে কাতারের অবস্থান

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয়, এই হামলা কাতারের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার স্পষ্ট লঙ্ঘন। কাতার এটিকে শুধু একটি সামরিক কার্যক্রম নয়, বরং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে একটি গুরুতর হুমকি হিসেবে দেখছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, তা মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি বিনষ্ট করতে পারে। কাতারের মতে, এই ধরনের হঠকারী কর্মকাণ্ড সংঘাতকে আরও উসকে দেবে এবং গোটা অঞ্চলকে অনির্দেশ্য এক বিপদের মুখে ফেলবে।

আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে জবাব দেওয়ার অধিকার দাবি

কাতার জাতিসংঘ মহাসচিবকে জানিয়েছে যে, জাতিসংঘ সনদ এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তারা এই হামলার উপযুক্ত জবাব দেওয়ার পূর্ণ অধিকার সংরক্ষণ করে। এর মাধ্যমে কাতার স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিয়েছে যে, তারা এই ইস্যুতে শুধু কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়ায় সীমাবদ্ধ থাকবে না, প্রয়োজনে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে।

ইরানি রাষ্ট্রদূতকে তলব, দোহা পরিস্থিতি নিয়ে সরব

ইরানের প্রতি কাতারের প্রতিক্রিয়া কেবল বিবৃতি ও চিঠিতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। দোহায় নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূতকে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এই তলবের মাধ্যমে কাতার তাদের অসন্তোষ ও উদ্বেগ সরাসরি প্রকাশ করেছে এবং ইরানকে এই হামলার জন্য দায়ী করেছে।

আল-উদেইদ ঘাঁটির কৌশলগত গুরুত্ব

উল্লেখ্য, আল-উদেইদ বিমানঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড (CENTCOM) পরিচালিত একটি কৌশলগত ঘাঁটি, যা মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক ভারসাম্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ঘাঁটি থেকেই আফগানিস্তান, ইরাক ও সিরিয়াসহ নানা জায়গায় যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা বিমান অভিযান চালিয়ে থাকে। এখানে প্রায় ১০,০০০ মার্কিন সেনা অবস্থান করছে। এই ঘাঁটির ওপর ইরানি হামলা শুধু কাতারের জন্য নয়, যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও একটি সরাসরি বার্তা বলেই আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয়, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করেছে কাতার

কাতার সরকার জানিয়েছে, ইরান থেকে ছোড়া সব ক্ষেপণাস্ত্র সফলভাবে প্রতিহত করা হয়েছে। দেশটির উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এ বিষয়ে সম্পূর্ণ প্রস্তুত ছিল। তবুও, তারা মনে করে এই ধরনের হামলা ভবিষ্যতে বড় আকারে সংঘর্ষের জন্ম দিতে পারে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান

কাতার তার চিঠিতে জাতিসংঘ মহাসচিবকে এই ইস্যুতে জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এখনই এগিয়ে আসতে হবে, যাতে এই ধরনের আগ্রাসী কর্মকাণ্ড পুনরাবৃত্তি না ঘটে। কাতার মনে করে, দেরি হলে পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে চলে যাবে যেখানে আর সমাধান সম্ভব হবে না।


উপসংহার: সংকটে কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা কাতারের চ্যালেঞ্জ

এই চিঠির মাধ্যমে কাতার একদিকে তার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আপসহীন অবস্থান তুলে ধরেছে, অন্যদিকে আঞ্চলিক শক্তিগুলোর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে চাইছে। কাতারের মতো ছোট কিন্তু কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ। এখন দেখার বিষয়, জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো কাতারের এই উদ্বেগ কতটা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে।

Related Topics:

Share: